ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছ তুলসী। এই গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ। তুলসী পাতার গুণ ও তুলসীর রসে তৈরি ওষুধের আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে। তুলসী পাতা শুধু নয়, পুরো গাছটাই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় লাগে।
তুলসীর ভেষজ গুণ অনেক। ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি ভরপুর থাকে তুলসীতে। আর থাকে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন, ক্লোরোফিল। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, জীবাণুনাশক গুণ আছে তুলসী পাতার। যে কোনও সংক্রামক ব্যাধির প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া তুলসীর মধ্যে আছে ইউজেনল, সিট্রোনেল্লোল, লিনালোল নামক এসেনশিয়াল ওয়েল। এই উপাদানগুলোর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ আছে। অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা যে কোনও প্যাথোজেনের সংক্রমণে শরীরে যে তীব্র প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন তৈরি হয়, তাকে কমাতে পারে এই এসেনশিয়াল ওয়েল।
প্রাচীনকালে তুলসি পাতা নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হত। বর্তমানে একটি সমীক্ষা বলছে তুলসী পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে নিয়মিত তুলসী পাতার রস খুব কার্যকরী। এতে শর্করার স্তর ঠিক থাকে, যার কারণে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম হয়।
নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হওয়া এই সমীক্ষা টাইপ টু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত রোগীদের উপর করা হয়। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশকে ডায়াবিটিসের ওষুধ খেতে বলা হয়, বাকিদের তার বদলে রোজ দেওয়া হয় ২৫০ মিলিগ্রাম তুলসির নির্যাসযুক্ত ক্যাপসুল।
সমীক্ষা শেষে দেখা যায়, ইনসুলিন ও ওষুধের উপর নির্ভর না করে কেবল তুলসী খেয়েই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তারা। কাজেই ইনসুলিনের ক্ষরণে তুলসীর যে ভূমিকা আছেই, তাতে আর সংশয় থাকে না।
তুলসী পাতা ভাল করে ধুয়ে নিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। এর ফলে তুলসীতে থাকা যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ গুণ সহজেই আপনার শরীরে প্রবেশ করবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও তুলসীর কোনও জুড়ি নেই।
চা খেতে ভালবাসেন? তাহলে দিনে অন্তত একবার তুলসী পাতা দিয়ে চা বানান। পানি গরম করে তাতে কয়েকটি তুলসী পাতা ফুটতে দিন। মিনিট তিনেক পর সেই পানি ফুটে গেলে ছেঁকে খান।
রান্নাতেও তুলসী পাতা ব্যবহার করা যায়। যে ধরনের রান্নায় তুলসী পাতা দিলে স্বাদ বাড়বে, সেই রকম রান্নায় তুলসী পাতা দিন।
তুলসী পাতা ভেজানো পানিও শরীরের জন্য উপকারি। রাতে এক গ্লাস পানিতে তুলসী পাতা ভিজিয়ে রেখে চাপা দিয়ে দিন। পরের দিন সকালে সেই তুলসী ভেজানো পানি খেয়ে নিন।